আমরা সকলে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজের এ মক্কি (রহ) কে মান্য করি । এমন কি দেওবন্দিদের পীর আশরাফ আলী থানভী সাহেব , রশিদ আহমেদ গাংগুহী সাহেব , কাশেম নানুতভী সাহেব , খলিল আহমেদ আম্ভাটভী সাহেবের ও পীর হচ্ছেন হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজের এ মক্কি (রহ) ।
আমি হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজের এ মক্কি (রহ) এর কিতাব ( ফায়সালা এ হাফতে মাসায়েল ) থেকে সম্পুর্ণ বর্ননা তুলে ধরতেছি ।
তিনি লিখেছেন যেঃ- ওরশ শব্দটি এই হাদিস থেকে নেয়া হয়েছে ( تم كنو مة العروس) মিত্তুর পরে নেক বান্দাদের কে বলা হবে বরের মত শুয়ে পড়। নেক বান্দাদের বেলায় মিত্তু হল মাহবুবে হাকিকির সাথে মিলনের নাম । এ জন্যই তাদের মিত্তু কে বেসাল বা মিলন বলা হয় । মাহবুবে হাকিকির সাথে মিলনের চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে ?
ওরশের প্রথা চালু করার উদ্দেশ্য ছিল মৃত বেক্তির রুহের প্রতি ইসালে সওয়াব করা , যা খুবই পছন্দনিয় কাজ । যে সব পূর বুযুর্গ থেকে আমরা ফয়েয বরকত লাভ করেছি , এ ব্যাপারে আমাদের উপর তাদের অধিক হক রয়েছে । আর ওরশে পীর ভাইদের সাহিত মেলা মেশার দরুন মিল মুহাববাত ও ভ্রাতত্ববোধ বৃদ্ধি পায় ও বরকতময়ও । আর এসব ওরশে অনেক পীর মাসায়েখ একত্রিত হয় হলে পীর খুঁজে পাওয়া ও সহজ হয় ও নিজের পছন্দনিয় পীরের কাছে মুরিদ হওয়া ও সহজ হয় । এভাবে এক সিলসিলার সকল লোক একত্রিত হয় একে অন্যের সাথে সাক্ষাত্কার সুযোগ ও ঘটে ও সাহেব এ মাযার এর প্রতি কোরান তিলাওয়াত খাবার বন্ঠনের সওয়াব ও পৌছানো হয় ।
এ মহৎ উদ্দেশ্য একটা নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয় । এখন প্রশ্ন হচ্ছে মিত্তুর দিল কে কেন ওরশের দিন নির্ধারণ করা হয় ? এর পিছনে কিছু রহস্য লুকায়িত আছে তা প্রকাশের দরকার নাই ( ফায়সালা এ হাফতে মাসায়েল) পৃষ্টা নং ১৫৭-১৫৮
পরের প্রসঙ্গ সামাঃ-
সামার বিষয়ে বাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজের এ মক্কি (রহ) ফায়সালা এ হাফতে মাসায়েল কিতাবে লিখেছেন যে ;- কয়েক সিলসিলায় সামার প্রচলন আছে । তাদের তাদের ওরশে জওক ও শওক বৃদ্ধি করার অভিপ্রায়ে সামা করে থাকে । একে মিল ওরশের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কিছু দেখি না । বরং কতিপয় ওলামা কেরাম হাদিসের দ্বারা সামা কে বৈধ প্রমান করেছেন ।
একটু হাদিস দ্বারা কতিপয় সন্দেহের উদ্রেগ হয় তা হল নবী (সা) বলেছেন , আমার কবর কে মেলায় পরিনত কর না । এ হাদিসের সঠিক অর্থ হল কবরের কাছে মেলা বসানো সাজ সজ্জা করা ধুম পানের আসর বসানো নিষেধ । কেননা কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হল মিত্তু পরকালের স্বরণ করা আনন্দ আহ্লাদ করা নয় ।
উপরোক্ত হাদিসের অর্থ এ নয় যে কবরের পাশে একত্রিত হওয়া নিষেধ ।
তা হলে ও যিয়ারতের জন্য বের হওয়া কাফেলা সমুহ মদিনা তাইয়েবা যাওয়া নিষেধ হতো। প্রমানিত হলে যে ওরশ উপলক্ষে একত্রিত হওয়া নিষেধ ও না যায়েয মনে করা ভুল ।
সারকথা হল কবর যিয়ারত একাকি বা দলবদ্ধভাবে যাওয়া উভয় যায়েয ও কোন কারন বশত দিন নির্দিষ্ট করা ও যায়েয ।
সামা স্বয়ং একটি বিতর্কিত মাসয়ালা । তালযন্ত্র (বাদ্যযন্ত্র) বিহিন সামা ও বিতর্কিত । কিন্তু মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরামের অভিমত হল যদি যায়েযের শর্ত সমুহ পাওয়া যায় ও ফেতনা ফ্যাসাদমুলক কোন কিছু না থাকে তা হলে যায়েয , নতুবা নাযায়েজ । এ নিয়ে ইমাম গাজালী (রহ) এর ইউয়ুয়ায়ে উলুমুদ্দিন কিতাবে বিস্তারিত বর্ননা আছে ।
বাদ্যযন্ত্র সহকারে সামার বিষয়ে ও মতভেদ আছে । কতক আলেম ওই সব হাদিস তুলে ধরেছেন যেগুলোতে বাদ্যযন্ত্র নিষেধ বোঝা যায় ও এ ব্যাপারে ফিকাহর দলিল পেশ করেছেন । কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) এ নিয়ে তার (সামা) পুস্তিকায় আলোচনা করেছেন । তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত সে সামার আদব ও শর্ত সমুহ থাকতে হবে ।
তবে আজকাল অধিকাংশ সামা মাহফিলে এসব শর্ত পালন করা হয় না ।
যাহোক সামা সম্পর্কে হাদিস সমুহ একক রেবায়েত ক্ষত ।ফলে এগুলোর তাবির সম্ভব । তাছারা এসব লোক নিজের অবস্খার পরিপ্রক্ষিতে সামা করতে বাধ্য । এরুপ অবস্থিত কারো প্রতি আপত্তি করাটা বড়ই দুষ্কর ।
এ বিষয়ে আমার নীতি হচ্ছে যে ,আমি প্রতি বছর আমার পীর মুরশিদের রুহের প্রতি ইসালে সওয়াব করে থাকি । প্রথমে কোরান তিলাওয়াত করা হয় ও সময় থাকলে মিলাদ শরিফ ও পাঠ করা হয় ও সর্বশেষ খাবার বন্ঠন করা হয় ও সওয়াব পীর মুরশিদের রুহের প্রতি বখশিষ করে দেওয়া হয় । এর বেশি আমি কোন কিছু করি না । বাদ্যযন্ত্র সহকারে বা বাদ্যযন্ত্র বিহিন কোন সামার অনুষ্টান আমার এখানে হয় না ।
তবে সামা কারীদের প্রতি আমার কোন আপত্তি ও নাই ।
তবে প্রদর্শনী মুলক সামা দুষনিয় । কিন্তু কোন শরয়ী দলিল বিহীন কাউকে তোষামদকারী বলে ফেলা সঙ্গত নয় । এ ক্ষেত্রে ইভয় দলের তাই রা উচিত যা আগে বলা হয়েছে । অর্থাৎ যারা ওরশ ও সামা করে না তারা সুন্নাতের পরিপূর্ন অনুসারী মনে কর , আর যারা সামা ও ওরশ করে তাদের কে আহলে মুহাব্বাত (সুফি ) মনে কর । একে অন্য কে অস্বীকার কর না এবং সাধারান লোকদের বাড়াবাড়ি কে শান্ত ও সহজ ভাবে প্রতিরোধ করার চেষ্টা কর ।
(ফায়সালা এ হাফতে মাসায়েল ) ১৬০ নম পৃষ্টা ।