♦ এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে

﴿ يَحۡذَرُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيۡهِمۡ سُورَةٞ تُنَبِّئُهُم بِمَا فِي قُلُوبِهِمۡۚ قُلِ ٱسۡتَهۡزِءُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ مُخۡرِجٞ مَّا تَحۡذَرُونَ ٦٤ وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ إِن نَّعۡفُ عَن طَآئِفَةٖ مِّنكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَةَۢ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ مُجۡرِمِينَ ٦٦ ﴾ [التوبة: ٦٤، ٦٦]

“মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের বিষয়ে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলি জানিয়ে দেবে। বল, ‘তোমরা উপহাস করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ বের করবেন, তোমরা যা ভয় করছ। আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।”
[সূরা আত-তাওবাহ : ৬৫-৬৬]

♦ দুনিয়াতে আল্লাহর লা‘নতপ্রাপ্ত ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمۡ عَذَابٗا مُّهِينٗا ٥٧ ﴾ [الاحزاب: ٥٧]

“নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।”
[সূরা আল-আহযাব: ৫৭]

আর রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করার মাধ্যমে তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেওয়া হয়। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,

♦ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি নাসারা ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আল ইমরান শিখল। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কেরানীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মোহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে, এর বাহিরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে, তখন নাসারারা বলতে লাগল, মোহাম্মদের সাথীরা এই কাজ করেছে; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল, এটা মোহাম্মদ এবং তার সাথীদের কাজ। কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল, এটা কোনো মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তার লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল”।

Reference :

★ বুখারী: ৩৬১৭
★ মুসলিম ২৭৮১

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেঃ
যদি কোনো ব্যক্তি বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সে রাসূলের অবমাননা করেছে, তবে তাকে মুরতাদ হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। এ বিষয়ে উম্মাতের সকল আলেম একমত হয়েছেন। কারণ,

♦ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ»
“যে ব্যক্তি তার দ্বীন (ইসলামকে) পরিবর্তন করলো তাকে তোমরা হত্যা কর।”

Reference :

★ বুখারী ৩০১৭; ৬৯২২;
★ তিরমিযী: ১৪৫৮;
★ আবু দাউদ: ৪৩৫৩;
★ নাসাঈ: ৪০৭০

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রূপ করার কারণে একজন সাহাবী তার নিজ দাসীকেও হত্যা করেছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেনে খুশি হয়েছেন।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে:

قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ أَنَّ أَعْمَى كَانَتْ لَهُ أُمُّ وَلَدٍ تَشْتُمُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَتَقَعُ فِيهِ فَيَنْهَاهَا فَلاَ تَنْتَهِى وَيَزْجُرُهَا فَلاَ تَنْزَجِرُ - قَالَ - فَلَمَّا كَانَتْ ذَاتَ لَيْلَةٍ جَعَلَتْ تَقَعُ فِى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- وَتَشْتِمُهُ فَأَخَذَ الْمِغْوَلَ فَوَضَعَهُ فِى بَطْنِهَا وَاتَّكَأَ عَلَيْهَا فَقَتَلَهَا فَوَقَعَ بَيْنَ رِجْلَيْهَا طِفْلٌ فَلَطَخَتْ مَا هُنَاكَ بِالدَّمِ فَلَمَّا أَصْبَحَ ذُكِرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَجَمَعَ النَّاسَ فَقَالَ: «أَنْشُدُ اللَّهَ رَجُلاً فَعَلَ مَا فَعَلَ لِى عَلَيْهِ حَقٌّ إِلاَّ قَامَ». فَقَامَ الأَعْمَى يَتَخَطَّى النَّاسَ وَهُوَ يَتَزَلْزَلُ حَتَّى قَعَدَ بَيْنَ يَدَىِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا صَاحِبُهَا كَانَتْ تَشْتِمُكَ وَتَقَعُ فِيكَ فَأَنْهَاهَا فَلاَ تَنْتَهِى وَأَزْجُرُهَا فَلاَ تَنْزَجِرُ وَلِى مِنْهَا ابْنَانِ مِثْلُ اللُّؤْلُؤَتَيْنِ وَكَانَتْ بِى رَفِيقَةً فَلَمَّا كَانَتِ الْبَارِحَةَ جَعَلَتْ تَشْتِمُكَ وَتَقَعُ فِيكَ فَأَخَذْتُ الْمِغْوَلَ فَوَضَعْتُهُ فِى بَطْنِهَا وَاتَّكَأْتُ عَلَيْهَا حَتَّى قَتَلْتُهَا. فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- «أَلاَ اشْهَدُوا أَنَّ دَمَهَا هَدَرٌ»

“ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন অন্ধ ব্যক্তির একটি উম্মে ওয়ালাদ (যে দাসীর গর্ভে মালিকের সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে) দাসী ছিল। ঐ দাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযথা কটূক্তি করতো। অন্ধ ব্যক্তি তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতেন ও নিবৃত করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু দাসী কিছুতেই বিরত হতো না। এক রাতে দাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি ও গালি-গালাজ করতে লাগলো। তখন লোকটি একটি কোদাল দিয়ে তার পেটে আঘাত করলো এবং তাকে হত্যা করলো। এ অবস্থায় তার একটি সন্তান তার দু পায়ের মাঝখানে পড়ে গেল এবং রক্তে ভিজে গেল। সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষয়টি জানানো হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের জড়ো করলেন এবং ঘোষণা দিলেন, আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছে সে যেন অবশ্যই দাঁড়ায়। তার প্রতি আমারও একটি হক রয়েছে। তখন অন্ধ লোকটি কাঁপতে কাঁপতে মানুষের কাঁতার ভেদ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে বসে পড়লো। অতঃপর লোকটি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঐ ঘটনার ব্যক্তিটি আমি। আমার দাসীটি আপনাকে গালি-গালাজ করতো এবং অযথা তর্কে লিপ্ত হতো। আমি তাকে বারণ করলেও সে বারণ হতো না। তার থেকে আমার মুক্তোর মতো দু’টি ছেলে রয়েছে। তার সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু গতরাতে সে যখন আপনাকে গালমন্দ করতে লাগলো আমি তখন তাকে একটি কুঠার নিয়ে তার পেটে আঘাত করি এবং তাকে হত্যা করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকদের বললেন, তোমরা সাক্ষি থাক! তার রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করা হলো (তাকে হত্যা করার জন্য হত্যাকারী অন্যায়কারী হিসেবে বিবেচিত হবে না)।”

Reference :

★ আবু দাউদ ৪৩৬৩,
★ ত্ববারানী ১১৯৮৪,
★ বুলুগুল মারাম ১২০৪,
★ দারাকুতনী ৮৯

শাস্তি না দিলে গোটা জাতি আল্লাহর গযবে পতিত হবেঃ
রাসূলের অবমাননা করার পর যদি সামর্থ থাকার পরও শাস্তি না দেয়া হয় তবে গোটা জাতি আল্লাহর গযবে পতিত হবে।

আল-কুরআনের সূরা আন-নূরের ৬৩ নং আয়াতে এসেছে,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور: ٦٣]

অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।”

তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢١٧ ﴾ [البقرة: ٢١٧]

“আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২১৭]

0 Comments:

Post a Comment

 
Top
Blogger Template