পাপাত্না ইয়াজিদের মন সর্বদাই এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ভালোবাসায় মদমত্ত ছিলো। তাই সে দুনিয়ার লোভ লালসায় উন্মাদ হয়ে প্রভূত্ব,আধিপত্য,যশ-খ্যাতির ফাঁদে আটকা পড়েছিলো। সে নিজের করুন পরিণতির কথা ভুলে গিয়ে হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও তাঁর সঙ্গীদের নির্দয়ভাবে শহীদ করে তাঁদের রক্ত দ্বারা নিজ হস্ত রন্ঞ্জিত করেছিলো। যে নেতৃত্ব ও আধিপাত্যের জন্য সে কারবালাতে জুলুম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের তান্ডবলীলা চালিয়েছিলো। সে নেতৃত্ব আধিপত্যও বেশি দিন তাঁর কাছে স্থায়ী ছিলোনা। বদ-নসীব ইয়াজিদ মাত্র তিন বৎসর ছয়মাস ক্ষমতার মসনদে বসে শাসনের নামে লাম্পট্য বদমাশি করে অবশেষে রবিউন নূর শরীফ, ৬৪ হিজরিতে শাম রাজ্যের হামস শহরে হুওয়ারিন অঞ্চলে ৩৯ বছর বয়সে সে অপমৃত্যুর মূখে পতিত হয়। [আল-কামেল ফিত তারিখ,খন্ড-৩য়, পৃষ্টা-৪৬৪]

পাপাত্না ইয়াজিদের অপমৃত্যুর একটি কারণ ইহাও বলা হয়ে থাকে যে, সে একজন রোমান বংশোদ্ভূত যুবতী মহিলার প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়েছিলো। কিন্তু সে মহিলা তাঁকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করতো। একদিন আমোদ-প্রমোদের বাহানা করে সে মহিলা ইয়াজিদকে একাকী সুদূর এক মরুভূমিতে নিয়ে গেলো। সে মরুভূমির ঠান্ডা ও শীতল আবহাওয়া ইয়াজিদকে কাহিল ও অবসন্ন করে ফেললো। তাই সে মাতালের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আর মহিলাও এ সুযোগ হাতছাড়া করলো না। যে পাপিষ্ঠ নিমকহারাম তাঁর নবীর প্রিয় দৌহিত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে কুণ্ঠিত হয়নি, সে আমার প্রতি কতোটুকু ওফাদার হতে পারে। এ বলে সে যুবতী মহিলা তাঁর চিকচিকে শানিত খঞ্জর দ্বারা ইয়াজিদের মাংসল দেহ খন্ডিত বিখন্ডিত করে তা মরুভূমিতে ফেলে চলে আসলো। কয়েকদিন যাবত্ তাঁর মৃতদেহটি চিল কাকের খোরাকে পরিণত ছিলো। অবশেষে খবর পেয়ে তাঁর অনুচরেরা তথায় পোঁছে তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ একটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসলো। [আওরাকে গম, পৃষ্ঠা-৫৫০]
ইবনে জিয়াদের করুণ পরিণতি:

হতভাগা ইয়াজিদের পদলেহী কুকুর চাটুকার ইবনে জিয়াদ, যে কারবালার প্রান্তরে গুলশানে রিসালাতের মাদানী পুষ্পদের ধুলিমলিন ও রক্তরঞ্জিত করেছিলো, তারও করুণ পরিণতি হয়েছিলো। পাপাত্না ইয়াজিদের পরে সবচেয়ে বেশি অপরাধী ছিলো, কুফার সে নিষ্ঠুর বর্বর, স্বেচ্ছাচারী শাসনকর্তা ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ। সে নরাধমেরই নির্দেশে হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও আহলে বায়েতদেরকে জুলুম নির্যাতনের নির্মম শিকারে পরিণত করেছিল। কিন্তু কালের বিবর্তন সে নরাধমকেও রেহাই দিলো না। যুগের আবর্তন বিবর্তনের করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে সে নরাধমও ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো। মুখতার সাখফীর নির্দেশে তাঁর সেনাপতি ইব্রাহিম বিন মালিক আস্তারের বাহিনীর হাতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ঘটনার মাত্র ৬ বংসর পর ১০ই মুহাররামুল হারাম ৬৭ হিজরীতে সে নরাধম ইবনে জিয়াদ নির্মমভাবে নিহত হলো। সৈন্যরা তাঁর মস্তক কর্তন করে ইব্রাহিমের নিকট নিয়ে এলো, আর ইব্রাহিম সে মস্তক কুফায় মুখতারের নিকট পাঠিয়ে দিলো। [সাওয়ানেহে কারবালা, পৃষ্ঠা-১২৩, সংক্ষেপিত]
কুফায় শাহী প্রাসাদ তাঁর মস্তক সজ্জিত করা হলো এবং যেখানে ৬ বত্সর পূর্বে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর পবিত্র শির মোবারক রাখা হয়েছিলো সেখানেই ইবনে জিয়াদের অপবিত্র মস্তক রাখা হলো। সে হতভাগ্য পাষন্ডের জন্য কান্নাকাটি করার মতো কেউ ছিলো না। বরং তাঁর অপমুত্যুতে সবাই আনন্দ উৎসব করেছিলো।
সহীহ হাদীসে ইমারাহ বিন উমাইর হতে বর্ণিত আছে, "যখন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মস্তক তাঁর সাথীদের মস্তকের সাথে রাখা হয়েছিলো তখন আমি সে মস্তকগুলো দেখার জন্য গিয়েছিলাম। হঠাৎ শোরগোল ও হৈ চৈ পড়ে গেলো,আমি দেখলাম একটি ভয়ংকর সাপ এসে মাথাগুলোর মাঝখানে অবস্থিত ইবনে জিয়াদের মস্তকের নাকের ছিদ্রে ঢুকে গেলো এবং সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বের হয়ে সাপটি অদৃশ্য হয়ে গেলো। অতঃপর আবার শোরগোল পড়ে গেলো, দুই - তিনবার এরূপ ঘটনা ঘটলো। [সুনানে তিরমিজি খন্ড ৫ম, পৃষ্ঠা-৪৩১, হাদীস নং- ৩৮০৫, দারুল ফিকর, বৈরুত]

ইবনে জিয়াদ, ইবনে সা'দ, সীমার, কায়েস বিন আসআছ, কন্দী, খাওলী বিন ইয়াজিদ, সিনান বিন আনাস নখয়ী, আব্দুল্লাহ বিন কায়েস, ইয়াজিদ বিন মালেক প্রমূখ হতভাগা পাষন্ডরা যারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)কে শহীদ করার জন্য অংশ নিয়েছিলো এবং যারা কারবালায় এই নির্মম বর্বরতার কাজের সাথে জড়িত ছিলো, তাদেরকে বিভিন্ন রকমের শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিলো এবং তাদের লাশ সমূহ ঘোড়ার পা দ্বারা পদদলিত করা হয়েছিলো। [সাওয়ানেহে কারবালা, পৃষ্ঠা-১৫৮]
ডাউনলোড করুন
এয়াযীদ সম্পর্কে আহলুস্ সুন্নাহর সিদ্ধান্ত
ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://www.mediafire.com/download/6yrgsvlb38cidb7/Yazid+Sompork.pdf



0 Comments:

Post a Comment

 
Top
Blogger Template