© আমাদের সকল কাজ ও ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত :-


★ “আপনি বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মৃত্যু - বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।”
সুরা আল-আনআ’মঃ ১৬২।


© শিরিক ও এর প্রকারভেদ :-

শিরক একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ সমকক্ষ করা, মিলানো, সংমিশ্রণকরা, একত্রকরণ, অংশীদার, ভাগাভাগি, সমান করা, সম্পৃক্ত করা

★ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তুমি যদি শিরক করো, তাহলে তোমার আমল নিষ্ফলহয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা জুমার :৬৫)।

শিরক দুই প্রকার :
(১) শিরিকে আকবর বা বড় শিরিক। যেমন : আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদত করা,
(২) শিরিকে আসগর বা ছোট শিরিক। যেমন : লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজকরা।



এই পোস্টের মুল আলোচনা রিয়া :-


© রিয়া কি?


★ রিয়া হল লোকের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য কোন ইবাদাত করা। { ফাতহুল মাজীদ, পৃঃ- ৫৩০}


© রিয়ার ছোট বা গুপ্ত শিরিক এবং এর পরিনাম সম্পর্কে :-


★ লোক দেখানো নামাজ মুনাফিকদের ১টি কাজ ছিল :-

وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَىٰ يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّـهَ إِلَّا قَلِيلًا

আর এই মুনাফিকরা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, লোকদের দেখায় এবং আল্লহ তায়া’লার যিকির খুবই কম করে। (সূরা নিসাঃ ১৪২)


★ فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ

অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, [সুরা মাউন: ৪]

الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ

যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর; [সুরা মাউন: ৫]

الَّذِينَ هُمْ يُرَاؤُونَ

যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে [সুরা মাউন: ৬]



★ রিয়া তথা লোক দেখানো ইবাদাত করা ছোট শির্ক। যা কবীরা গুণাহর চাইতেও ভয়ংকর।


★ রিয়াকে গুপ্ত শির্ক বলা হয়েছে। যা মাসীহ দাজ্জালের চাইতেও মারাত্মক। { ইবনু মাজাহ, হা/ ৫২০৪}


★ রাসুল (সা) যুগে রিয়াকে ছোট শিরকে গণ্য করা হতো। { তাবারানী, হা/ ৭১৬০; হাকিম, ৪/ ৩২৯ ; ছহীহ তারগীব, ১/ ১৮}


★ মাহমুদ ইবন লুবাইদ বর্ণনা করেছেন:
 “রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য আমি যা সবচেয়ে বেশী ভয় করি, তা হল ছোট শিরক বা শিরক আল আসগার।’ সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, ছোট শিরক কি?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘রিয়া (লোক দেখানোর জন্য কাজ করা), নিশ্চয়ই আল্লাহ পুনরুত্থান দিবসে প্রতিদান দেওয়ার সময় লোকদের বলবেন, ”পার্থিব জীবনে যাদেরকে দেখানোর জন্য তোমরা কাজ করেছিলে, তাদের কাছে যাও এবং দেখ তাদের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে পার কিনা।’ ” (আহমাদ, বায়হাকী,তাবারানী,বাগাভী)


★আরেকটি হাদীসে মাহমুদ ইবন লুবাইদ বলেন,
 “রাসূল (সা) বের হয়ে এলেন এবং ঘোষণা করলেন, ‘হে জনগণ, গোপন শিরক সম্বন্ধে সাবধান!’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, গোপন শিরক কি?’ তিনি বললেন, ‘যখন কেউ সালাতে দাঁড়ায় এবং লোকে তাকিয়ে দেখছে জেনে তার সালাত সুন্দরভাবে আদায়ের চেষ্টা করে; এটাই গোপন শিরক।’ ”
{ ইবনু মাজাহ, হা/ ৪২৭৯ ; আহমাদ, ৩/ ৩০; ইবনু খুযাইমাহ, হা/ ৯৩৭ }


★  হযরত যুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর জন্য এবং মানুষের নিকট প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য কোন আমল করে আল্লাহ তাআলা তার অবস্থা মানুষকে শুনিয়ে দিবেন। (অথাৎ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সামনে তার দোষ-ক্রটি প্রকাশ করে তাকে অপমান ও অপদস্ত করবেন।) আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে আল্লাহ তাআলা তাকে রিয়াকারীর শাস্তি দিবেন।

(বুখারী- ২/৯৬২, মুসলিম- ২/৪১২, তিরমিযী- ২/৬১,ইবনে মাজাহ- ২/৩১০, মুসনাদে আহমাদ- ৩/৪০, শুয়াবুল ঈমান- ৫/৩৩০, তারগীব- ১/৩১, মেশকাত- ৪৫৪)
কোন কোন আলেম এর উদ্দেশ্যে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, রিয়াকারীকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার প্রাপ্ত ছওয়াব শুধু দেখাবেন, দিবেন না । ছওয়াব দেখে সে খুব আফসোস করতে থাকবে।


★ রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেছেনঃ
“কিয়ামাতের দিন যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সত্ত্বার কিয়দংশ উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী-পুরুষগণ সকলেই তাঁর সম্মুখে সিজদায় পড়ে যাবে। তবে সিজদা থেকে বিরত থাকবে কেবল ঐ সমস্ত লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষকে দেখানোর জন্য ও প্রশংসা পাওয়ার জন্য সিজদা (সালাত আদায়) করতো। তারা সিজদা করতে চাইবে বটে, কিন্তু তাদের পিঠ ও কোমর কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে (ফলে সিজদা করতে পারবে না)।”
বুখারী, মুসলিম, মিশকাতঃ ৫৩০৮।


★ হান্নাদ (রহঃ) আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেউ বাহাদুরী প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে, কেউ গোত্রীয় গৌরব রক্ষার্থে লড়াই করে আর কেউ রিয়াকারী করে লড়াই করে এদের মধ্যে কোনটি আল্লাহর পথে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি এই জন্য লড়াই করে যেন আল্লাহর নাম সমুন্নত হয় সে ব্যক্তই আল্লাহর পথে প্রতিষ্ঠিত। এই বিষয়ে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহ বর্ণিত রিওয়ায়াতটি হাসান-সহীহ।
হাদিস নম্বরঃ 1652
গ্রন্থের নামঃ জামে তিরমিজী (ইফাঃ)



★ আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, সে হবে একজন (ধর্মযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী) শহীদ। তাকে আল্লাহ্‌র নিকট উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ পাক তাকে (দুনিয়াতে প্রদত্ত) নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সেও তা স্মরণ করবে। এরপর আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়াতে তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য (কাফেরদের সাথে) লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ্‌ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তোমাকে যেন বীর-বাহাদুর বলা হয়, সেজন্য তুমি লড়াই করেছ। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) তোমাকে দুনিয়াতে তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর সে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেছে (এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে)। তাকে আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে হাযির করা হবে। অতঃপর তিনি তাকে নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি স্বয়ং দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছি এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরআন তেলাওয়াত করেছি।

তখন আল্লাহ্‌ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং তুমি এজন্য ইলম্ শিক্ষা করেছ, যেন তোমাকে ‘বিদ্বান’বলা হয় এবং এজন্য কুরআন অধ্যয়ন করেছ, যাতে তোমাকে‘ক্বারি’ বলা হয়। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী ) তোমাকে বিদ্বান ও ক্বারীও বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। সুতরাং তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর এমন এক ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহ্ তাআলা বিপুল ধন-সম্পদ দান করে বিত্তবান করেছিলেন। তাকে আল্লাহ্‌ তাআলা প্রথমে প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সে তখন সমস্ত নেয়ামতের কথা অকপটে স্বীকার করবে। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নেয়ামতের শুকরিয়ায় তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে ধন- সম্পদ ব্যয় করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে, তোমার সন্তুষ্টির জন্য সেসব খাতের একটি পথেও ব্যয় করতে ছাড়িনি। আল্লাহ্‌ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছিলে, যাতে তোমাকে বলা হয় যে, সে একজন ‘দানবীর’। সুতরাং (তোমার অভিপ্রায় অনুসারে দুনিয়াতে) তোমাকে ‘দানবীর’বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। নির্দেশ মোতাবেক তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । [মুসলিম হা/১৯০৫ ‘নেতৃত্ব’অধ্যায়, অনুচেছদ-৪৩; মিশকাত-আলবানী হা/২০৫, ‘ইলম’অধ্যায় ]


★ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনো শিরক থেকে বাঁচার গুরুত্বপূর্ণ একটা দুয়াঃ

আবু মুসা বলেন, “একদিন আল্লাহর রাসূল (সা) এক ভাষণে বললেন ‘হে লোকসকল, শিরককে ভয় কর, কারণ এটি পিঁপড়ার চুপিসারে চলার চেয়েও গুপ্ত।’ যারা আল্লাহ চেয়েছিলেন জিজ্ঞাসা করল, ‘আমরা কিভাবে এ থেকে বেঁচে থাকব যদি তা পিঁপড়ার চলার চেয়েও গুপ্ত হয়, ইয়া রাসূলুল্লাহ?’ তিনি বললেন,


اللَّهُمَّ  إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩।
হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।

0 Comments:

Post a Comment

 
Top
Blogger Template