রাসূল সাঃ এর ইন্তেকালের পর হযরত সাইয়্যেদা ফাতিমা রাঃ একেবারে ভেঙ্গে পরেন। সব সময়
পেরেশান থাকতেন। সর্বক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন, কখন রাসূল সাঃ সেই ভবিষ্যৎবাণী তথা সর্বপ্রথম
রাসূল সা. এর সাথে হযরত ফাতেমাই মিলিত হবেন বাস্তবায়িত হবে। কাজকর্মে একদম মন
বসতো না। ছেলে-মেয়ে ছিল সবই ছোট ছোট। কিন্তু তাদের দেখাশোনা করতে অক্ষম হয়ে
পড়েছিলেন। তখন হযরত আসমা বিনতে উমাইস জান্নাতী মহিলাদের সর্দর হযরত ফাতিমা (রা.) এর
পরিবারের দেখাশোনার মহান সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি নিষ্ঠার সাথে ফাতিমা রাঃ এর পরিবারের দেখভাল
করতে থাকেন।
আসমা বিনতে উমাইস ছিলেন রাসূল সাঃ এর আপন চাচাত ভাই হযরত যাফর তাইয়্যার রাঃ এর স্ত্রী। হযরত যাফর রাঃ যখন মুতার যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। তখন আসমা বিনতে উমাইসকে প্রথম খলীফা হযরত
আবু বকর রাঃ বিবাহ করেন। তিনিই হযরত ফাতিমা রাঃ এর পরিবারের পূর্ণ দেখভাল করতে থাকেন।
যেহেতু হযরত ফাতিমা রাঃ খুবই লজ্জাবতী ছিলেন।
তাই তিনি হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাঃ কে বলে রাখলেন যে, যেহেতু খোলাভাবে জানাযা
পড়ালে পর্দার মাঝে কমতি আসে। যা আমি খুবই অপছন্দ করি। তাই আমি চাই আমার জানাযা নিয়ে যাওয়ার
সময় এবং দাফন করার সময় পূর্ণ পর্দা রক্ষা করা হবে।
এ কারণে তুমি এবং আমার স্বামী ছাড়া আমার গোসল করানোর সময় আর কারো সহযোগিতা
নিও না। আর রাতের বেলায়ই যেন জানাযা নিয়ে যাওয়া হয়।
হযরত আসমা রাঃ বললেন, হে আল্লাহর রাসূলের (নয়নমনি) কন্যা ! আমি হাবশায় দেখেছি যে, জানাযার উপর গাছের শাখা বেঁধে উপরে কাপড় দিয়ে ঢেকে
দেয়া হয়। এর দ্বারা ঢুলির মত একটি আকৃতি বানানো
হয়ে থাকে। এটা বলে হযরত আসমা রাঃ খেজুরের
কিছু ঢাল আনালেন। তারপর এগুলোকে একত্র
করে এর উপর কাপড় টাঙ্গিয়ে হযরত ফাতিমা রাঃ কে
দেখালেন। এ দৃশ্য দেখে হযরত ফাতিমা রাঃ খুবই
খুশি হয়ে বললেন, আরে! এতো খুবই সুন্দর
পদ্ধতি! মা ফাতিমা (রা.) এর মৃত্যুর পর ঠিক এভাবেই ঢাল
দিয়ে তার উপর কাপড় টাঙ্গিয়ে রাতের বেলাই দাফন
কাফন সম্পন্ন করা হয়।
★ আসাদুল গাবা-৫/৫২৪,
★ তবকাতে ইবনে সাদ-৮/২৫৭,
★ তারীখে আহলে বাইতে আতহার-৬৭৭-৬৭৯
জানাযা কে পড়িয়েছিল?
হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা রাঃ এর জানাযার নামায কে
পড়িয়েছিল? এ ব্যাপারে হাদীস, তারীখ ও
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত ও শিয়াদের কিতাবে
তিনটি নাম পাওয়া যায়। যথা-
১-হযরত আলী রাঃ।
২-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ।
৩-হযরত আবু বকর রাঃ।
{তাবাকাতে ইবনে সাদ-৮/২৫, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩৩৩}
ﻋﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﻣﺎﺗﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻨﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺠﺎﺀ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﻟﻴﺼﻠﻮﺍ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻟﻌﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ :
ﺗﻘﺪﻡ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﺎ ﻛﻨﺖ ﻷﺗﻘﺪﻡ ﻭﺃﻧﺖ ﺧﻠﻴﻔﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﺘﻘﺪﻡ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ . “
ইমাম যাফর সাদেক রহঃ তার পিতা ইমাম মুহাম্মদ বাকের
রহঃ থেকে বর্ণনা করেন-
হযরত ফাতিমা রাঃ ইন্তেকাল করলে হযরত আবু বকর
রাঃ জানাযার নামায পড়তে আগমন করেন। তখন হযরত
আবু বকর রাঃ হযরত আলী রাঃ কে বললেন, আপনি
জানাযার নামায পড়ান। তখন হযরত আলী রাঃ বললেন,
আপনি আল্লাহর রাসূলের খলীফা! আপনার আগে
যেতে পারবো না। তাই হযরত আবু বকর রাঃ
সামনে এগিয়ে নামায পড়ালেন।
{কানযুল উম্মাল-১২/৫১৫, হাদীস নং-৩৫৬৭৭}
ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺴﻴﻨﻘﺎﻝ :
ﻣﺎﺗﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﻭﺍﻟﻌﺸﺎﺀ , ﻓﺤﻀﺮﻫﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﻭﻋﺜﻤﺎﻥ
ﻭﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻋﻮﻑ , ﻓﻠﻤﺎ ﻭﺿﻌﺖ ﻟﻴﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻲ -
ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺗﻘﺪﻡ ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﺑﻜﺮ ﻗﺎﻝ : ﻭﺃﻧﺖ ﺷﺎﻫﺪ ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﺍﻟﺤﺴﻦ؟ ﻗﺎﻝ :
ﻧﻌﻢ ﺗﻘﺪﻡ ﻓﻮﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻏﻴﺮﻙ , ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ -ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻨﻬﻢ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ- ﻭﺩﻓﻨﺖ ﻟﻴﻠًﺎ . ﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ ﻭﺧﺮﺟﻪ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﻥ ﻓﻲ
ﺍﻟﻤﻮﺍﻓﻘﺔ.
অনুবাদ- হযরত জাফর সাদেক রহঃ তার পিতা মুহাম্মদ
বাকের থেকে, আর তিনি তার পিতা যাইনুল
আবেদীন থেকে বর্ণনা করেন যে, খাতুনে
জান্নাত ফতিমা রাঃ এর ইন্তেকাল মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি
সময়ে হয়। তখন হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উসমান
রাঃ, হযরত যুবায়ের এবং হযরত আব্দুর রহমান বিন
আউফ রাঃ জানাযার নামাযের জন্য উপস্থিত হন। হযরত
আলী রাঃ জানাযার নামায পড়ানোর জন্য আমীরুল
মুমিনীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ কে বললেন।
হযরত আবু বকর রাঃ বললেন, হে আবুল হাসান!
আপনার উপস্থিতিতে আমি কিভাবে জানাযা পড়াই?
হযরত আলী বললেন, আপনি এগিয়ে আসুন!
আল্লাহর কসম! আপনি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি
হযরত ফাতিমা রাঃ এর জানাযা পড়াবে না। অতএব হযরত
আবু বকর রাঃ ই হযরত ফাতিমা রাঃ এর জানাযার নামায পড়ান।
আর সেই রাতেই তাকে দাফন করা হয়।
{আররিয়াজুন নাজরাহ ফী মানাকিবিল আশারাহ লিমুহিব তাবারী-১/১৫৬}