অহংকার বা কিবিরের সংজ্ঞা
কিবিরের আভিধানিক অর্থ:
আল্লামা ইবনে ফারেছ রহ. বলেন, কিবির অর্থ: বড়ত্ব, বড়াই, অহংকার ইত্যাদি। অনুরূপভাবে الكبرياء অর্থও বড়ত্ব, বড়াই, অহংকার। প্রবাদে আছে:
ورثوا المجد كابرًا عن كابر.
অর্থাৎ, ইজ্জত সম্মানের দিক দিয়ে যিনি বড়, তিনি তার মত সম্মানীদের থেকে সম্মানের উত্তরসূরি বা উত্তরাধিকারী হন।
আর আল্লামা ইবনু মানযূর উল্লেখ করেন, الكِبْر শব্দটিতে কাফটি যের বিশিষ্ট। এর অর্থ হল, বড়ত্ব, অহংকার ও দাম্ভিক।
আবার কেউ কেউ বলেন, তাকাব্বারা শব্দটি কিবির হতে নির্গত। আর تَكابَر من السن শব্দটি দ্বারা বার্ধক্য বুঝায়। আর তাকাব্বুর ও ইস্তেকবার শব্দটির অর্থ হল, বড়ত্ব, দাম্ভিক ও অহমিকা।
________________________
লিসানুল আরব ১২৫/৫০
ইসলামী পরিভাষায় কিবিরের সংজ্ঞা:
রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজেই স্বীয় হাদিসে কিবিরের সংজ্ঞা বর্ণনা করেন।
عن عبد الله بن مسعود، عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: «لا يْدخُلُ الجَنةََّ مَنْ كَانَ فِي قَلْبهِِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كبِرٍ قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحبُِّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حسَنًا، وَنْعُلُه حَسَنَةً. قَالَ: إِنَّ الله جَميِلٌ يُحبُ الجَمَالَ، الْكبِر بَطَرُ الحَقِّ، وَغَمْطُ الناَّسِ»
অর্থ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, যার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোন কোন লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? উত্তরে রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহর তা‘আলা নিজেই সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। [সুন্দুর কাপড় পরিধান করা অহংকার নয়] অহংকার হল, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা।
★ মুসলিম ৯১
عن سهل بن سعد الساعدي قال: «مَرَّ رجل على رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال مَا تَقُولُونَ فِي هَذَا قالوا حِرٌّي إن خطب أَنْ ينكح وَإن شفع أن يُشَفَّعَ، وإن قال أَنْ يْسَتَمعَ، قال ثم سكت، فَمَرّ رجل من فقراء المسلمين، فقال مَاتَقُولُونَ فِي هَذَا قالواحِرٌّي إنْ خطب أن لا ينكح و َإِنْ شفع أَنْ لَا يُشَفَّعَ، وإن قال أَنْ لَا يْسَتَمعَ، فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم هَذَا خَيٌر مِنْ مِلِْء الْأرَْضِ مِثْلَ هَذَا»
অর্থ, সাহাল ইবনে সা’দ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সামনে দিয়ে এক ব্যক্তি অতিক্রম করে যাচ্ছিল, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সমবেত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এ লোকটি সম্পর্কে কি বল, তারা উত্তরে বলল, লোকটি যদি কাউকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হয়, যদি কারো বিষয়ে সুপারিশ করে, তাহলে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, আর যদি কোন কথা বলে, তার কথা শোনা হয়। তাদের কথা শোনে রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] চুপ করে থাকেন। একটু পর অপর একজন দরিদ্র মুসলিম রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করে যাচ্ছিল, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে দেখে সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করে বলেন, তোমরা এ লোকটি সম্পর্কে মতামত দাও! তারা বলল, যদি সে প্রস্তাব দেয়, তাহলে তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়া হয় না, আর যদি সে কারো বিষয়ে সুপারিশ করে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না, আর যদি সে কোন কথা বলে তার কথায় কান দেয়া হয় না। তখন রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, এ লোকটি যমিন ভরপুর যত কিছু আছে, তার সব কিছু হতে উত্তম।
★ বুখারি ৫০৯১
খালেদ ইবনে মেদান রহ. বর্ণনা করেন, আমর ইবনে আসওয়াদ আল-আনাসি যখন মসজিদ থেকে বের হতেন, তখন তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাতকে চেপে ধরতেন। তাকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, আমি আশংকা করি, আমার হাত আমার সাথে বেঈমানি করবে!।
★ সীয়ারু আলামীন নুবালা ৮০/৪
আল্লামা হাফেয যাহবী রহ. বলেন, তিনি হাঁটার সময় হাত নড়াচড়া করা ও দোলানোর আশংকায় হাত-দ্বয় জোড়া করে রাখতেন। কারণ, হাত দোলানো অহংকারের অন্তর্ভুক্ত।
আলী ইবনে হুছাইন রা. যখন হাঁটতেন, তার হাত-দ্বয় তার উরু অতিক্রম করত না এবং সে হাত নড়াচড়া করত না।
★ সীয়ারু আলামীন নুবালা ৩৯৬/৪ তারিখে দেমেশক ৪১৭/৪৫
আল্লামা মুজাহিদ বলেন, অহংকারী ও লজ্জিত লোক কখনোই জ্ঞান অর্জন করতে পারে না।
reference :
★ বুখারি সংক্ষিপ্ত সনদে কথাটি বর্ণনা করেন। পরিচ্ছেদ: ইলম অর্জনে লজ্ঝা, আর আবু নয়াই হুলিয়াতে ২৮৭/৩ বর্ণনা করেন, আল্লামা ইবনে হাজর ফতহুল বারীতে [২২৯/১] বলেন, মুজাহিদের এ কথাটি আলী ইবনে আল মাদীনের সনদে আবু নুয়াইমের নিকট পোছে। তিনি ইবনে উয়াইনা থেকে আর তিনি মানছুর থেকে
বর্ণনা করেন। মুসান্নিফের শর্তানুযায়ী সনদটি বিশুদ্ধ।
অহংকার জমি ধ্বস ও কবর আযাবের কারণ হয়।
রাসূল সা. হাদিসে বিষয়টি স্পষ্ট করেন। যেমন-
عن أبي هريرة قال: «قال النبي صلى الله عليه و سلم بَيْنَمَا رَجُلٌ مِمنّْ كَانَ قَبْلكُمْ يمْشِي فِي حُلَّةٍ تُعْجُبهُ نَفْسُهُ، مُرَجِّلٌ جُّمتَهُ، إذِْ خَسَفَ الله بهِِ الْأرَض فَهُو يَتَجْلَجُل فيِهَا إلِى يَوِْم الْقِيَاَمِة»
অর্থ, আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তোমাদের পূর্বের যুগের এক লোক একটি কাপড় ও লুঙ্গি পরিধান করে ও তার চুল গুলো তার কাঁধের উপর ঝুলিয়ে অহংকার করে হাঁটছিল। কাপড়দ্বয় লোকটিকে অহংকারের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা লোকটিকে যমিনের অভ্যন্তরে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত পুঁততে থাকবে। আর সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এ দিক সেদিক নড়াচড়া করতে থাকবে।
Reference :
★ বুখারী ৫৭৮৯ মুসলিম ২০৮৮
আল্লামা ফিরোজ আবাদি রহ. বলেন, স্থান ধ্বসে যাওয়া অর্থ হল, সে ভু-গর্বে চলে গেল। আর আল্লাহ অমুককে যমিনে ধ্বসে দিল, অর্থাৎ, তাকে যমিনে গায়েব করে ফেলল।
আল্লামা ইবনে হাজার রহ. বলেন, يمشي في حلة এর অর্থ হল, একটি চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করে হাঁটছিল। আর মুসলিম শরিফে আবু হুরাইরা রা. হতে হাদিসটি এ শব্দে বর্ণিত-
«بَيْنمَا رجُل يتَبخْتَر فِي بُرْدَيْهِ»
مرجل جمته
এ কথাটির অর্থ, চুলগুলোকে একত্র করে মাথা থেকে নিয়ে কাঁধ পর্যন্ত অথবা তার চেয়ে আরও বেশি ঝুলিয়ে দেয়া। الشعر ترجيل “তারজীলুশ শার” কথাটির অর্থ, মাথা আঁচড়ানো ও মাথায় তেল লাগানো।
]إذْ خَسَفَ الله بهِِ الْأرَْض فَهَو يتَجَلْجَل فيِهَا إلَى يَوْم الْقِيَامَة[
:التجلجل التحرك
তাজালজুল শব্দের অর্থ হল, নড়াচড়া করা। আবার কেউ কেউ বলেন, আওয়াযের সাথে নড়াচড়া করা। আর আল্লামা ইবনে ফারেস রহ. বলেন, التجلجل শব্দের অর্থ, কঠিন ভু-কম্পনসহ যমিনে ধ্বসে যাওয়া এবং এদিক সেদিক নড়বড় করা। সুতরাং, يتجلجل في الأرض শব্দের অর্থ হল, যমিনে নামতে থাকবে কঠিন কম্পন ও হরকত সহ। আর হাদিসের অর্থ হল, যমিন এ লোকটির দেহকে ভক্ষণ করবে না ফলে তাকে ধ্বংস করা সহজ হবে। আর বলা হবে সে এমন এক কাফের যার দেহ মৃত্যুর পর নি:শেষ হবে না।
★ ফাতহুল বারী ২৬১/১০
• পরকালের জীবনে অহংকারের শাস্তি:
এক. অহংকারী ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের সাথে ধ্বংস হবে।
عن فضالة بن عبيد قال: «قال النبي صلى الله عليه و سلم ثلاَثةٌ لا تَسْألَ عَنْهُمْ: رَجٌل يُناَزِعُ الله فِي كبِريَاءِهِ، فَإنَ رِدَاءَُه الْكبِريَاءُ، وَإزارهُ الِعَّزُة، وَرُجلٌ يَشُك فِي أَمْرِ الله، وَالْقَنُوطُ مِنْ رَحَمةِ الله »
অর্থ, ফুযালা ইবনে উবাইদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তিন ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে তোমরা আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। এক-যে ব্যক্তি আল্লাহ বড়ত্ব নিয়ে আল্লাহর সাথে ঝগড়া করে। কারণ, বড়ত্ব হল আল্লাহর চাদর আর তার পরিধেয় হল ইজ্জত। দুই- যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে। তিন. যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়।
★ ইবনে হাব্বান ৪৫৫৯
দুই. অহংকারীরা কিয়ামত দিবসে রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ও অবস্থানের দিক দিয়ে\ অনেক দুরে হবে।
عن جابر أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال: «إنَِّ مْن أََحبِّكُمْ إلِيَّ وَأَقْرَبِكْم مِنِّي مَجْلسًا يَوَْم الْقِيَاَمِة أَحَاسِنكُمْ أَخْلَاقًا، وَإِنَّ أَبْغَضُكمْ إلَّي وَأَبعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلسًا يَوَْم الْقِيَاَمِة الَّثْرثارونَ وَالَمُتَشِّدقُونَ وَالمُتَفَيْهِقُونَ. قَالُوا: يَا رَسُولَ الله، قَدْ عَلمِناَ الَّثْرَثاُرونَ وَالَمُتَشِّدقُونَ، فَمَا المُتَفَيْهِقُونَ؟ قَالَ: المُتَكَبِّرُونَ»
অর্থ, জাবের রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, কিয়ামত দিবসে তোমাদের মধ্যে যে আমার খুব প্রিয় ও মজলিশের দিক দিয়ে আমার একেবারে নিকটে অবস্থান করবে, সে হল তোমাদের মধ্যে যারা আখলাক ও চরিত্রে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে যে সর্বাধিক ঘৃণিত এবং মজলিশের দিক দিয়ে আমার অনেক দুরে অবস্থান করবে, সে হল, যে অতিরিক্ত ও দীর্ঘ কথা বলে এবং মানুষের নিকট মুখ ভরে কথা বলে। সাহাবারা বললেন, যারা অতিরিক্ত ও দীর্ঘ কথা বলে, তাদের আমরা জানলাম, কিন্তু যারা মানুষের নিকট মুখ ভরে কথা বলে, তারা কারা? তিনি বললেন, অহংকারীরা।
★ তিরমিযি ২০১৮
তিন. অহংকারীরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, যে অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তার উপর ক্ষুব্ধ:
عن ابن عمر قال: «سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول :مَن تَعَّظمَ فِي نَفْسِهِ أَوْ اخْتَالَ فِي مِشْيَتهِِ لِقيَ الله وَهُوَ علَيْهِ غَضْبَانُ»
অর্থ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মনে মনে নিজেকে বড় মনে করে এবং হাঁটার সময় অহংকার করে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে যে অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তার উপর রাগান্বিত।
★ আহমদ: ৫৯৫৯
চার. অহংকারীদের আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন অত্যন্ত অপমান অপদস্ত করে একত্র করবে:
عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : « يُحْشَرُ المُتَكَبِّرُوَن يَوَْم الْقِيَاَمِة أَمْثاَل الَّذرِّ فِي صَوِر الِّرجَالِ، يَغْشَاهُمْ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ، فَيُسَاقُونَ إِلَى سِجْنٍ في جَهَنمََّ يسَمَّى بُولَس، تَعلُوُهْم نَارُ الْأنيَاِر يُسَقوَْن مِنْ عُصَاَرةِ أهْلِ النَّارِ طيِنةََ الَخبَالِ»
অর্থ, আমর ইবনে শোয়াইব হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, অহংকারীদের কিয়ামতের দিন বড় মানুষের আকৃতিতে ছোট ছোট পিপড়ার মত করে একত্র করা হবে। অপমান অপদস্থ সব দিক থেকে তাকে গ্রাস করে ফেলবে। তারপর তাকে জাহান্নামের মধ্যে একটি জেলখানা যার নাম ‘বুলাস’, তার দিকে টেনে হেঁচড়ে নেয়া হবে। তাদেরকে জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুন চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে ফেলবে। আর তাদেরকে জাহান্নামীদের পিত্ত, পুঁজ ও বমি থেকে তাদের পানীয় দেয়া হবে।
★ তিরমিযি ২৪৯২ তিনি বলেন হাদীসটি হাসান।
পাঁচ. অহংকার জান্নাতে প্রবেশের প্রতিবন্ধক:
عن عبد الله بن مسعود عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: « لا يْدخُلُ الجَنةََّ مَنْ كَانَ فِي قَلْبهِِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كبْرٍ قال رجل: إن الرجل : يحب أن يكون ثوبه حسنا ونعله حسنة. قال إن الله جَميِلٌ يُحبُ الجْمَالَ، الِكْبر بَطُر اْلحقَِّ، وَغمط الناَّسِ»
অর্থ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, যার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোন কোন লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহর তা‘আলা নিজেই সুন্দর তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হল, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা।
★ মুসলিম ৯১
ছয়. অহংকারীদের জন্য জাহান্নামের ওয়াদা দেয়া আছে:
عن حارثة بن وهب الخزاعي قال: «سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول ألَا أُخْبِركُمْ بأَهْلِ الجَنَّةِ، كُلُّ ضِعيفٍ مَتضِّعفٍ لَوْ أَْقسَمَ عَلَى الله لَأبَّرُه، أَلَا أُخْبِركُمْ بأَهْلِ النَّارِ، كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِر »
অর্থ, হারেসা ইবনে ওহাব আল খাজায়ী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, আমি তোমাদের থেকে কারা জান্নাতি তাদের বিষয়ে খবর দিব কি? তারা হল সব দুর্বল ও অসহায় লোকেরা তারা যদি আল্লাহর শপথ করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের দায় মুক্ত করে। তারপর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, আমি কি তোমাদের কারা জাহান্নামে যাবে তাদের বিষয়ে খবর দিব? তারা হল, সব অহংকারী, দাম্ভিক ও হঠকারী লোকেরা।
★ বুখারি ৪৯১৮, মুসলিম ২৮৫৩
অপর হাদিসে আছেঃ-
عن أبي هريرة قال: «قال رسول الله صلى الله عليه و سلم اْحَتجّْت النَّارُ وَالجَنَّةُ فَقَالَتْ الناَّرُ: يْدخُلُنِي الجَبَّارُونَ وَالمُتَكَبِّرُونَ وَقَالَتْ الجَنَّةُ: مَا لِي لَا يْدخُلُنيِ إلا ضعَفَاءُ الناَّسِ وَسَقَطُهُمْ؟ فَقَالَ الله عزَّ وَجَلَّ للِناَّرِ أَنْتِ عَذَابِي أَُعذِّب بكِِ مَنْ أَشَاءُ وَرَُّبمَا قَالَ أُصِيبُ بكِِ مَنْ أَشَاءُ وَقَالَ للِجَنةَِّ: أَنْتِ رَحَمتيِ أَرْحُم بكِِ مَنْ أَشَاءُ وَلكُلِّ وَاحِدٍة مِنْكُمَا مِلْؤُهَا»
অর্থ, আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে বিতর্ক করে, জাহান্নাম বলে, আমার নিকট বড় বড় দাম্ভিক ও অহংকারীরা প্রবেশ করবে আর জান্নাত আল্লাহকে বলে, কি ব্যাপার আমার ভিতর শুধু দুর্বল ও বিতাড়িত লোকেরা প্রবেশ করে। তখন আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে বলে, তুমি হলে আমার আযাব। আমি তোমার মাধ্যমে যাকে চাই তাকে আযাব দিব। অথবা আল্লাহ বলেন, তোমার মাধ্যমে আমি যাকে চাই তাকে পাকড়াও করবো আর জান্নাতকে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তুমি আমার রহমত আমি তোমার দ্বারা যাকে চাই তাকে রহম করব। আর তোমাদের উভয়ের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে যথাযোগ্য অধিবাসী।
★ বুখারি: ৪৮৫০ মুসলিম: ২৮৪৬
আল্লামা ইবনে হাজার রহ. বলেন, হাদিসে দুটি শব্দ অর্থাৎ, المُتَكِّبِرينَ ও المتَجِّبرينَ উল্লেখ করা হয়, কেউ কেউ বলেন, শব্দ দুটির অর্থ একই। আবার কেউ কেউ বলেন, না, দুটি শব্দের অর্থ দুটি المُتَكِّبِرينَ শব্দের অর্থ হল ঐ সব অহংকারী যারা তাদের মধ্যে নাই এমন কিছু নিয়ে অহংকার করে। আর المتَجِّبرينَ শব্দের অর্থ, তার নিকট যা আছে তা নিয়ে বড়াই করা।
সাত. অহংকারীদের অপমান অপদস্ত করে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا فُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَآ أَلَمۡ يَأۡتِكُمۡ رُسُلٞ مِّنكُمۡ يَتۡلُونَ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِ رَبِّكُمۡ وَيُنذِرُونَكُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَاۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَلَٰكِنۡ حَقَّتۡ كَلِمَةُ ٱلۡعَذَابِ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٧١ قِيلَ ٱدۡخُلُوٓاْ أَبۡوَٰبَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَاۖ فَبِئۡسَ مَثۡوَى ٱلۡمُتَكَبِّرِينَ ٧٢﴾ ]الزمر: 71,72[
অর্থ, আর কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত’? তারা বলবে, ‘অবশ্যই এসেছিল’; কিন্তু কাফিরদের উপর আযাবের বাণী সত্যে পরিণত হল। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর চিরকাল তোমরা সেখানে অবস্থান করবে। অহংকারীদের বাসস্থান কতই না মন্দ।[সূরা যুমার, আয়াত: ৭১,৭২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ﴾ ]غافر: 60[
অর্থ, আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ [সূরা গাফের, আয়াত: ৬০]
عن أبي هريرة قال: «قال رسول الله صلى الله عليه و سلم قَالَ الله عَّز وَجَلَّ: الْكبْريَاءُ رِدَائيِ، وَالَعظَمَةُ إِزَارِي، فَمَنْ نَازَعَنيِ وَاِحًدا مِنهُمَا قَذَفْتُهُ فِي الناَّرِ»
অর্থ, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অহংকার হল আমার চাদর আর বড়ত্ব হল আমার পরিধেয়। যে ব্যক্তি আমার এ দুটির যে কোন একটি নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।
★ আবুদাউদ:৪০৯০, আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেন।